আগামী বিধানসভা ভোটে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর চ্যালেঞ্জ ইতিমধ্যেই একাধিকবার ছুঁড়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে ভোটের প্রায় দশ মাস আগে থেকেই দক্ষিণ কলকাতার গেরুয়া শিবিরে ঘনাচ্ছে অশান্তির মেঘ। জেলা নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং সাংগঠনিক অনিয়মে দলের রণকৌশল কার্যত এলোমেলো বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
দলের একাংশের অভিযোগ, যারা বর্তমান জেলা সভাপতির ঘনিষ্ঠ নন, তাঁদের ‘সক্রিয় সদস্যপদ’ ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হচ্ছে। যদিও বিজেপির নির্দেশ অনুসারে, অন্তত ৫০ জন প্রাথমিক সদস্য যোগ করাতে পারলেই কর্মীকে ‘সক্রিয় সদস্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ছিল। সেই নিয়ম মেনেও অনেককে সদস্যপদ দেওয়া হয়নি বলে দাবি দক্ষিণ কলকাতার বেশ কিছু ওজনদার নেতা-কর্মীর।
এই তালিকায় উঠে এসেছে আলিপুরের রাকেশ সিংহ, প্রাক্তন সহ-সভাপতি ওঙ্কারনাথ চক্রবর্তী, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সঞ্জু দাশগুপ্ত, বেহালার প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি দিব্যেন্দু সামন্ত, ইন্দ্রনাথ দুয়ারির মতো নেতাদের নাম।
সম্প্রতি এক সাংগঠনিক কর্মসূচিতে জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানাতে দেখা যায় ওঙ্কারনাথ ঘনিষ্ঠ একদল কর্মীকে। সেখানে হাতাহাতিরও ঘটনা ঘটে। প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক, যাঁর সঙ্গেই অবশেষে সরাসরি কথা বলেন বিক্ষুব্ধরা।
অন্যদিকে, রাকেশ সিংহ একটি ফেসবুক লাইভে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন:
"যেদিন আমার ঝামেলা করার দরকার হবে, বুক বাজিয়ে করব। এমন ব্রহ্মস মারব যে, দুনিয়া মনে রাখবে।"
তিনি আরও দাবি করেন, একাই ৭৫০-এর বেশি প্রাথমিক সদস্য যোগ করিয়েছেন এবং তাঁদের অনেকেই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
জানা গেছে, জেলা সভাপতি আবার দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্ধারিত কমিটি গঠনের ফর্মুলাও মানছেন না। পুরনো কমিটির ৫০% সদস্যকে নতুন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ থাকলেও, জেলা সভাপতি তাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
প্রসঙ্গত, সভাপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন,
"এগুলো দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমি যা করছি, তা আমার উচ্চতর নেতৃত্ব দেখছেন। নিয়ম না মানলে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।"
শুভেন্দু অধিকারীর ‘ভবানীপুর চ্যালেঞ্জ’ সফল করতে গেলে দক্ষিণ কলকাতার সংগঠনকে চাঙ্গা করাই প্রথম শর্ত — এমনটাই মনে করছে দলের একাধিক স্তরের কর্মীরা। কিন্তু বাস্তব বলছে, আপাতত সেখানেই রণক্ষেত্র।
No comments:
Post a Comment